সিংগাইরে জামাই – শ্বশুরের লড়াই

Photo of author

By Akash Khan

আকাশ খান – প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে সিংগাইর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার- প্রচারণা তুঙ্গে। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। ভোটে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে দুজনই বর্তমান সংসদ সদস্য দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। এদের একজন হচ্ছে “আনারস” প্রতীকের হাজী আব্দুল মাজেদ খান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এছাড়া হিসেবে উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের একাধিকবারের চেয়ারম্যান। তার প্রধান প্রতিপক্ষ নিজ দলের অন্যতম নেতা কাপ-পিরিচ প্রতীকের সায়েদুল ইসলাম। তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সম্পর্কে হাজি আব্দুল মাজেদ খান সায়েদুল ইসলামের উকিল শ্বশুর। ভোটের মাঠে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় আত্মীয়তার সম্পর্কে চলছে টানাপড়েন। উভয়ের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দু- একটি ধাওয়া – পাল্টা ধাওয়ায় পরিবেশ অনেকটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের সাবেক সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের ১৫ বছরের রাজত্ব হাত ছাড়া হয়ে গেছে। সেই স্থান দখল করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামীলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু।এ চেয়ারম্যান হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুজনই গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর পক্ষে কাজ করেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এই দুজন প্রার্থী হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য জাহিদ আহমেদ টুলু। তবে এমপি – মন্ত্রীদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী প্রচারণায় বিধি-নিষেধ থাকায় তিনি অনেকটাই নিরাপদে রয়েছেন। অপরদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম কুলুপ আঁটা মুখে ঝিমুনোর কারণে তার অনুসারী নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।নির্বাচনী এলকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সিংগাইর উপজেলায় আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক পক্ষ- প্রতিপক্ষের দ্বন্দ্ব। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদটি এখনো সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের হাতে। তাছাড়া তার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমান শহিদ মমতাজ বেগমের সাবেক স্বামী প্রয়াত রশিদ বয়াতির ভাগ্নে। কমিটিতে বেশির ভাগই রয়েছে মমতাজ অনুসারী। তাছাড়া সিংগাইর পৌরসভার বর্তমান মেয়র মমতাজ বেগমের সৎ ছেলে। মোটকথা সিংগাইরের পদধারী নেতার একটা অংশ এখনো মমতাজের অনুসারী। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মমতাজ বেগমের ব্যক্তিগত কোনো প্রার্থী কার্যত নেই। তিনি অবস্থান করছেন দেশের বাইরে যে কারণে তার অনুসারীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। দলীয় কর্মসূচিতে মমতাজ বেগমকে না পেয়ে অনেকের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছেবর্তমান সংসদ সদস্য দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর দুই কর্মী নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতীয় রয়েছেন। তবে মাজেদ-সায়েদুল দুজনেই সংসদ সদস্যের প্রার্থী বলে সাফ জানিয়েছেন তিনি। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মমতাজকে ফায়দা লুটার সুযোগ দিতে চান না বর্তমান সংসদ দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু। সিংগাইর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান-আওয়ামী লীগ নেতা মুশফিকুর রহমান খান হান্নান উপজেলা পরিষদ ছেড়ে তিনি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বাইরে রয়েছেন। তবে তার অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে হান্নান কাপ-পিরিচের প্রার্থী সায়েদুল ইসলামকে সমর্থন দিয়েছেন। এখানে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে তৃতীয় জন আব্দুল হাকিম। তিনি একাধিকবার জামির্ত্তা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ইতোপূর্বে সুযোগ বুঝে চেয়ারম্যান হওয়ায় জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সাধ নিয়েছেন। নির্বাচনে তাকে নিয়ে তেমন একটা সাড়া নেই। বরাবরই এই উপজেলাটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানকার বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বাচনে ভোট বয়কট করেছেন। উপজেলা নির্বাচন নিয়েও তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে। হাকিম বিএনপির ভোটের সুযোগ নিতে চাইলেও ক্ষমতার বাইরে থা থাকা দলটি তাকে বিষফোঁড়া হিসেবে দেখছেন।এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের তালা প্রতীক নিয়ে মো. রমিজ উদ্দিন, মাইক প্রতীক নিয়ে অ্যাড. আব্দুস সালাম মোল্লা ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে সদ্য আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত তোফাজ্জল হোসেন তোফাজ টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অপরদিকে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারা খাতুন ও উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি দল থেকে অজীবনের জন্য বহিষ্কৃত আফরোজা রহমান লিপি কলস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উল্লেখ্য, উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৫ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭০৩ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৮৭ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ৩ জন।

Leave a Comment